অভিমানী বৃষ্টিতে

বৃষ্টি (আগষ্ট ২০১২)

Muntasir Maruf
  • ৫৩
আনন্দে ছোট্ট শিশুর মতো লাফাতে ইচ্ছে করে নীরার। কিন্তু সে তো আর এখন ছোট্ট মেয়েটি নেই। তাই নাচের ইচ্ছেটা মনে রেখে চোখ-মুখের উজ্জ্বল হাসিতেই ধরে রাখে আনন্দটুকু। স্টেজ থেকে নিচে নেমে আসে সিঁড়ি বেয়ে। দর্শক সারির মাঝ দিয়ে যাওয়ার সময় এদিক ওদিক থেকে সিনিয়র-জুনিয়র-ব্যাচমেটদের হাততালি-শিস আর ছুঁড়ে দেওয়া মন্তব্য তার আনন্দের সাথে মিশিয়ে দেয় লজ্জার আভাও। দর্শকসারির মাঝামাঝি ওর কয়েক ব্যাচমেটকে বসে থাকতে দেখে নীরা এগিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে আবীরের কথা। ওরা জানায়, কিছুক্ষণ আগে এখানেই ছিল। এখন কোথায় গেছে জানে না। কিন্তু নীরার গান আবীর শুনেছে বলে ওরা জানায়। কলেজের রোটার‌্যাক্ট ক্লাব আয়োজন করেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই এখানে পারফরমার, তারাই দর্শক।
স্টেজের দিকে তাকিয়ে নীরা দেখে, জুনিয়র কাশ্মীরী মেয়ে উযমা গান গাইছে এখন। আবছা আলোয় যতটুকু দেখা যায় অডিটরিয়ামের ভেতরটা দেখে নেয় সে। আবীরকে চোখে পড়ে না কোথাও। বাইরে বেরিয়ে আসে নীরা।
আবীরকে ফোন করে। কয়েক রিংয়ের পর ফোন ধরে আবীর।
নীরা জিজ্ঞেস করে - ‘কোথায় তুমি?’
‘এইতো চত্বরে।’
‘চত্বরে কেন?’
‘এমনি।’
অডিটরিয়ামের মূল গেটের সামনে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে লেডিস হোস্টেলের ঠিক বাইরেই কলেজ চত্বরের মাঝে বসে থাকার জায়গাটা। কিন্তু এখন রাত বলে গেট থেকে বোঝা যাচ্ছে না আবীর ঠিক কোথায়। নীরা চত্বরে এসে আবীরকে এক কোণায় চুপ করে বসে থাকতে দেখে। ধীর পায়ে ওর পাশে গিয়ে বসে। বলে - ‘প্রোগ্রাম দেখবা না?’
আবীর কোন জবাব দেয় না। নীরা জানে, আবীরের মন খারাপ। জানে মন খারাপের কারণটাও। কিন্তু কারণটা মেনে নিতে পারে না ও। কি এমন খারাপ কাজটা করেছে সে? ফার্ষ্ট ইয়ার থেকেই সে ব্যাচ আর কলেজের বিভিন্ন ফাংশনে গান গেয়ে আসছে। এবারও বরাবরের মতো প্রোগ্রামের আয়োজক সিনিয়র ভাইয়া-আপুরা ধরেছে। নীরার নিজেরও উৎসাহ ছিল। কিন্তু আবীরের তাতে সায় ছিল না। অবশ্য এ নিয়ে খুব বেশী জোরাজুরি করেনি। প্রথমে একবারই বলেছে, এটা তার পছন্দ না। এ কারণে নীরা করবে না বলেই ভেবেছিল। কিন্তু সহপাঠী আর অন্যদের কাছে কারণটা বলতে বাধছিল তার। নিজেকে এবং আবীরকেও তাতে সবার সামনে ছোট করা হবে বলে মনে হয়েছিল। সে যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার আলোচনা করতে চেয়েছে, আবীর শুধু বলেছে - ‘তোমার ইচ্ছে।’
এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আবীরের মুখ ভার ভার। নীরার রিহার্সালও দেখতে আসেনি সে। বুঝতে পারলেও নীরা এ নিয়ে কোন কথা বলেনি আর। অনুষ্ঠানে গান শোনার পর আবীরের রাগ পড়ে যাবে বলে ধারণা ছিল ওর। কেননা, আবীর যখন শুধুই নীরার সহপাঠী বা বন্ধু ছিল, যুগল সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি তখনো, ওর গানের খুব ভক্ত ছিল আবীর, সময়ে-অসময়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠতো সে।
কিন্তু আজ আবীর এ নিয়ে কোন কথা বলে না। নীরা নিজেই জানতে চায়- ‘কেমন হইছে?’
‘ভাল’- শুষ্ক, নিরাসক্ত কন্ঠ।
‘লোকজন কেমন তালি দিচ্ছিল দেখছো?’
আবীর কোন জবাব দেয় না। নীরার আনন্দ উবে যায়।
তবু সে চেষ্টা করে ওকে স্বাভাবিক করতে। আবীরের হাতের আঙুলের ফাঁকে নিজের আঙুলগুলো রেখে চেপে ধরে। কিন্তু আবীর কোন সাড়া দেয় না। তাকিয়ে থাকে অন্যদিকে। নীরার দুচোখ জলে ভরে যায়। সে মৃদু স্বরে বলে- ‘এর আগে তুমি আমার গানের কত প্রশংসা করছো। আর আজকে? কি এমন খারাপ কাজটা করছি আমি?”
আবীর তেমনি নিশ্চুপ।
নীরার চোখ উপচে জল গড়ায়। ভেজা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে- ‘খাইছো রাতে?’
‘না।’ - আবীর বোঝে নীরার চোখে অশ্র“, কিন্তু তাকিয়ে দেখে না।
‘খাবা না?’
‘কোথায়?’
‘কোথায় মানে?’
‘কোথায় মানে এতরাতে কোথায় খাব?’ আবীরের কন্ঠে বিরক্তি।
রাত কেবল ন’টা বাজে। এখনও তারা বেরোলে পুরানো ঢাকার নিরব বা কাঁটাবনের অষ্টব্যঞ্জন বা হাতিরপুলের শর্মায় খেয়ে আসতে পারে। এমন সময়ে কত রাতেই তো খেয়েছে ওরা।
নীরা একটু কঠিন গলায় বলে, ‘বল যে, তোমার আমার সাথে থাকতে অসহ্য লাগতেছে।’
‘আমি তা তো বলি নাই।’
‘বলতে আর বাকী কি রাখছো?’
আবীর কোন জবাব দেয় না।
‘আমি কি চলে যাব?’ -নীরা জানতে চায়।
‘তোমার থাকতে ইচ্ছে না করলে আমি তো আর জোর করে থাকতে বলতে পারি না।’
কথার কি ছিরি! নীরার বুকের ভেতর চাপ চাপ কষ্টের তীব্রতা বাড়ে।
‘তুমি এমন করতেছো কেন? আমি স্যরি বলতেছি। জীবনে আর কখনো কোন শো করবো না।’ ব্যাকুল স্বরে বলে নীরা।
আবীর চুপ করে থাকে।
নীরা উঠে দাঁড়ায়।
‘তুমি যাচ্ছ?’ আবীরের প্রশ্ন শুনে নীরা ভাবে, হয়তো এখন ও মত বদলাবে। বলে, ‘হ্যাঁ।’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। হোস্টেলে খেয়ে নিও।’ - বলে আবীর সোজা হাঁটা দেয় তার হোস্টেলের দিকে। নীরা পিছন থেকে তাকিয়ে থাকে আবীরের দিকে। কিন্তু আবীর ফিরে তাকায় না। দৃষ্টির সীমা থেকে চলে যাওয়ার পরও পথের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে নীরা। আশা করে, হয়তো কিছুক্ষণ পরেই ফিরে আসবে আবীর।
অপেক্ষায় সময় কাটে নীরার। অনুষ্ঠান শেষ হয়। সবাই একে একে বেরিয়ে আসছে অডিটরিয়াম থেকে। কাউকে চোখের পানি দেখাতে চায় না নীরা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে ঢুকে পড়ে ওর হোস্টেলের ভেতর।

রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় নীরা। গালে-চোখে মাখানো প্রসাধনীর প্রলেপ, খোপার ফুল, হাতভরা চুড়ি, কানের ঝুমকা - তেমনি থেকে যায়। শাড়িটাও জড়িয়েই থাকে গায়ে। রাজ্যের অলসতা যেন ভর করে শরীরে। বিছানা-লাগোয়া জানালাটা খুলে সে অন্যমনস্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাইরের দিকে। ছাত্রী-হোস্টেল আর কলেজ ভবনের মাঝের চত্বরটা এখন উচ্ছ্বাসের কোলাহলে জমজমাট। অনুষ্ঠান শেষে অডিটরিয়াম থেকে বেরিয়ে সবাই আড্ডা জমিয়েছে সেখানে। জুটিরা আলাদা- একটু দূরে দূরে, আধো আলোছায়ায়। আবার অনেকে দলবেঁধে কোরাসে গলা ফাটাচ্ছে। জীবনের ঐ কাকলিতে তারও অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু আবীরের অন্যায় ক্রোধ দুজনের আনন্দটাই এখন মাটি করেছে। অন্যায়-ই তো! কি এমন অপরাধ করেছে নীরা! ফের বিপ্রতীপ ভাবনাও ঢোকে তার মনে। ক্রোধ? নাকি অনুরাগের অভিমান এটা? ভালবাসার যুক্তিহীন দাবী? তবুও... আজ এমনটা না করলেই কি চলতো না ওর? এক এক বার মনে হয় আবীরকে ডেকে আনে আবার, চত্বরের ঐ প্রাণের মেলায় যোগ দেয় দুজনে। অলস দৃষ্টি ফেলে সে মুঠোফোনটার দিকে। আবার পরক্ষণেই আহত অভিমান ভেতর থেকে বাধা দেয়। যে অতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, তার সামনে কাঙালপনার কি-ই বা দরকার? মুঠোফোনটা বন্ধ করে দেয় নীরা।

কত পরিকল্পনাই না ছিল মনে মনে! অনুষ্ঠান শেষে দুজন রাতের খাওয়াটা সারবে পরিচিত রেস্টুরেন্টগুলোর কোন একটায়- হয়তো নিরব, ভ্যাগাবন্ড বা অস্ট ব্যঞ্জনে। তারপর ফিরে এসে কলেজের ছাদে বসবে পাশাপাশি, হাতে হাত রেখে। একটু-আধটু দুষ্টুমি হয়তো করতে চাইবে আবীর। নীরা চোখের কোণে হাসি ঝুলিয়ে, কৃত্রিম রাগের ভান করে তাকে কিছুটা প্রশ্রয় দেবে, কিন্তু খুব বেশী নয়। মাঝরাত পর্যন্ত তারা বসে থাকবে ‘ছোট ছাদে’ - মূল ভবনের ছাদের প্রায় লাগোয়া ভবনের বর্ধিতাংশের যে ছোট্ট জায়গাটাকে আবীর ‘টং’ বলে। ছাদের ঐ অংশ থেকেই কেবল আকাশের দিকে তাকালে আশপাশের উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো চোখের সামনে তেমন একটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। আবীরের পাশে বসে রাতের নক্ষত্রভরা ঐ আকাশ দেখার ইচ্ছে ছিল আজ তার।

এখন এই রুমের ভিতর থেকে জানালার পাঁচ শিকের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে একটু খানি আকাশ দেখতে পায় নীরা। স্থির জোনাকপোকার মতো ইতিউতি ছড়ানো নক্ষত্রগুলো কেমন যেন ম্লান মনে হয়। এক পাশে চাঁদটাও মনমরা হয়ে পড়ে আছে। তখনই খেয়াল হয়, ময়লা-কালো মেঘগুলো ইতস্তত ছুটে বেড়াচ্ছে আকাশ জুড়ে। বৈশাখের এই সময়টায় বিনানোটিশে হঠাৎ হঠাৎ-ই আকাশ রং পাল্টায়। আজ সারাদিন ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘগুলো সারসের পালকের মতো সাদাই ছিল। কিন্তু এই রাতে সেগুলো মলিন এখন। ছোট ছোট মেঘগুলো দুর্বিণীত স্পর্ধায় চাঁদকে আড়াল করে দিচ্ছে মাঝে সাঝে। তারপর ছুটে গিয়ে বড় কোন মেঘের সাথে মিশে যাচ্ছে। আকারে আরো বিশাল হচ্ছে মেঘগুলো, আকাশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে নক্ষত্রের অধিকার। আকাশের এই পরাজয়ে বাতাসও যেন মুখ লুকিয়েছে কোথাও।

দেখতে দেখতে মেঘের দল গিলে ফেলল পুরো চাঁদটাকেই। পৃথিবীটাকে ডুবিয়ে দিতে চাইলো গাঢ় অন্ধকারে। কিন্তু এই নাগরিক আয়োজনে কৃত্রিম বিদ্যুতের আলো সে-ই অন্ধকারকে এখানে অতটা গাঢ় হতে দিল না। সেই হতাশায়ই যেন বুনো ষাঁড়ের মতো গর্জন করে উঠলো মেঘগুলো। ক্ষোভ মেটাতে হঠাৎই রাশি রাশি বৃষ্টি ছুড়ে দিল সেখান থেকে। সেই সাথে হিমালয়ের গা ছুঁয়ে যেন ছুটে এলো জলো হাওয়া।

চত্বরের কলরব তাতে আরো বেড়ে গেল। প্রায় সবাই বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছুটলো যার যার নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। মেয়েরা ঢুকে পড়লো মেয়েদের হোস্টেলে, ছেলেরা তাদের হোস্টেলের দিকে ছুটলো। কেউ অবশ্য ঐ বৃষ্টির জল গায়ে মেখে আনন্দ নিতে নিতে ছুটে বেড়ালো চত্বরময়। একসময় হাওয়ার বেগ বাড়লো। ছাত্রী হোস্টেলের দেয়ালঘেঁষে উঁচুতে মাথা তুলে দাঁড়ানো কৃষ্ণচূড়া আর নারিকেল গাছগুলোর ঝুঁটি ধরে নাড়া দিয়ে যেন শাসিয়ে গেল ঝড়ো হাওয়া। হাওয়ার শাসানির কাছে গাছগুলোকে মাথা নোয়াতে দেখে বাকি ছেলেমেয়েরাও ফিরে চললো নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে।

খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাট এসে ভিজিয়ে দিচ্ছিল নীরাকে। গায়ে কাঁপন ধরাচ্ছিল হিম-বাতাসও। কিন্তু সে উঠে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে না। হিম-বাতাসের ছোঁয়ায় তার মনের ভেতর জমাট বাধা অভিমান গলতে থাকে। ঐ গলতে থাকা অভিমানে তার চোখের পাতার নিচের দু দীঘির জলও উপচে পড়ে। নিজেকে আরও অসহায়, একাকী লাগে তার, তবু অনুভূতির জানালাটা বন্ধ করে না সে।

মানুষের তৈরী কৃত্রিম আলো একসময় হার মানে প্রকৃতির রুদ্রমূর্তির সামনে। কলেজ ভবনের নিচে বা হাসপাতালের সামনে টিমটিম করে জ্বলা বাতিগুলো নিভে যায় হঠাৎ। খাদের অতল থেকে এক রাশ অন্ধকার কে যেন ছুঁড়ে মারে নীরার জানালার পাশে। বনলতা সেনের চুলের মতো আঁধার হয়ে যায় চারদিক। শুধু কৃষ্ণচূড়া আর নাম-না জানা গাছগুলোর আবছা বিশৃংখল অবয়ব টের পায় নীরা।

অনেকক্ষণ কেটে যায় এভাবেই। হাত উঠিয়ে দুচোখের জল মোছার চেষ্টাও করে না নীরা। অবশ্য বৃষ্টি তার শরীর ছুলেও চোখের পাতা ছোঁয় না, তার ‘এত সাধের কান্নার দাগ’ও তাই ধুয়ে যায় না। বার বারই তার আবীরের কথা মনে পড়ে, বেলা-অবেলায় বলা ভালবাসার টুকরো কথাগুলো ফিরে এসে কান ছুঁয়ে যায় যেন, একটা-দুটো পুরনো দৃশ্য ভেসে ওঠে মনের পর্দায়। দীঘিতে শুধু জল বেড়েই চলে।

কাছে কোথাও বাজ পড়ার প্রচন্ড শব্দ হয়। কেঁপে ওঠে পুরো পৃথিবী। নীরাকেও কাঁপিয়ে দিয়ে যেন বাস্তবে ফিরিয়ে আনে। কয়েক সেকেন্ড পরই ক্যামেরার ফ্ল্যাশের মতো উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। একটা ঝলক মাত্র। পরমুহূর্তেই নিভে যায় মেঘ ফূঁড়ে নেমে আসা সাদা আলো। কিন্তু ঐ এক মুহূর্তেই চত্বরে মিলনের কবরের পাশে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অবয়বটা চোখে পড়ে নীরার। চমকে ওঠে সে। মাঝে মাঝে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ের জন্য ঝলসানো বিদ্যুতে অবয়বটা হয়তো অস্পষ্টভাবে আগেও চোখে পড়েছে তার, কিন্তু সেই অবয়বটা এতক্ষণ ভেতরটা জুড়ে ছিল এত প্রচন্ডভাবে যে, বাইরের দিকটায় মনোযোগই ছিল না।

মৃত পড়ে থাকা মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে তাতে জীবনের স্পর্শ দেয় নীরা। ফোন করে আবীরকে। ভেজাস্বরে প্রশ্ন করে - ‘কি?’
আবীরের আওয়াজ স্পষ্ট শোনানোর জন্যই যেন বৃষ্টি তার নিজের আওয়াজ কমিয়ে দেয়, মেঘ তার গর্জন থামিয়ে দেয়। তবুও বোঝা যায় আবীর কথা বলছে ম্লান, নিচু স্বরে- ‘কিছু না’।
‘কখন এসেছো?’
‘এই তো, এলাম মাত্র।’
নীরা বোঝে, আবীর সত্যি কথা বলছে না, সে এসেছে আরও অনেক আগে। প্রচন্ড বৃষ্টি আর বাতাসের তীব্র আঘাতে নিজেকেই শাস্তি দিয়েছে এতক্ষণ।
‘রুমে যাও।’ - নরম গলায় বলে নীরা।
‘হু’। বলে আবীর, কিন্তু সে যে নিশ্চল মূর্তির মতো ঠায় সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, ফোনের এ প্রান্ত থেকেও তা বোঝে নীরা।
কিছুক্ষণ চুপচাপ। কেউ কথা বলে না।
‘আচ্ছা যাও না এখন, সকালে কথা বলবো।’ নীরা অবশেষে নীরবতা ভাঙে।
‘স্যরি।’ ভাঙা, বৃষ্টিভেজা স্বর আবীরের।

আবার দীঘি উপচায়। এবার দীঘিতে আর অভিমানের ঢেউ নেই, আনন্দের স্রোত খলবলিয়ে ওঠে। গাঢ় স্বরে নীরা বলে, ‘আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, তোমাকে আর ভিজতে হবে না। যাও। কালকে কিন্তু পুষিয়ে দিতে হবে, মনে রেখ।’
‘অবশ্যই, সুদে -আসলে। আমি আসলেই দুঃখিত সোনা। মাপ চাই।’ অপরাধবোধের সাথে স্বস্তি আর আনন্দের মিশেল আবীরের কন্ঠে।

বৃষ্টির ধারা ক্ষীণ হয়ে আসে। মেঘের নীচে চাপা পড়া নক্ষত্রগুলোও উঁকি ঝুঁকি দেয়। অন্ধকারের তেজ কমে আসায় আবীরকে আবছামতো দেখতে পায় এখন নীরা। কিন্তু ঐ দূর থেকে আবীর জানালার শিকের ওপারে থাকা নীরাকে দেখতে পায় না, শুধু অনুভব করে সেখানে তার উপস্থিতি। তবু ঐ জানালা লক্ষ্য করে নীরার উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে আবীর রওয়ানা দেয় হোস্টেলের দিকে।

আবীর দৃষ্টিসীমানার বাইরে না যাওয়া পর্যন্ত চোখের পলকও ফেলে না নীরা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক মান অভিমানে ভরপুর প্রেমের গল্প...খুব ভালো লাগলো...শুভ কামনা....
বশির আহমেদ মান অভিমানে ভরা একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প । বেশ চমঁকার লিখেছেন ।
আহমেদ সাবের এক জোড়া কপোত-কপোতীর মান-অভিমানের চমৎকার চিত্র। বেশ ভাল লেগেছে গল্পটা।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ দেখতে দেখতে মেঘের দল গিলে ফেলল পুরো চাঁদটাকেই। পৃথিবীটাকে ডুবিয়ে দিতে চাইলো গাঢ় অন্ধকারে। কিন্তু এই নাগরিক আয়োজনে কৃত্রিম বিদ্যুতের আলো সে-ই অন্ধকারকে এখানে অতটা গাঢ় হতে দিল না। --- ---- মারুফ ভাইয়া , অনেক সুন্দর লিখেছেন । আপনার হাত অনেক দক্ষ । শুভ কামনা ।
আজিম হোসেন আকাশ ভাল লাগল। ভাল থাকুন।
ধন্যবাদ। ভাল থাকুন আপনিও।
Sisir kumar gain সুন্দর প্রেমের গল্প, সাথে বৃষ্টির পরশ।বেশ ভাল লাগল।

২৫ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪